জমজম ইসলামী হাসপাতাল, রাজশাহী

world asthma day ZIHr

বিশ্ব এ্যাজমা দিবস

এ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুসহ যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। এ্যাজমায় মানুষ মারা যায় না বললেই চলে কিন্তু সুচিকিৎসার অভাবে তারা বেশ কষ্ট পায়। বিশ্বব্যাপী এ্যাজমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার বিশ্ব এ্যাজমা দিবস পালন করা হয়।

এ্যাজমা শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। এই প্রদাহের ফলে শ্বাসনালি ফুলে যায় এবং অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ অনুভব করা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং বুকের মধ্যে বাঁশির মতো শোঁ শোঁ আওয়াজ হওয়া ইত্যাদি। এ অবস্থায় শ্বাসনালিতে যদি ধুলা, ঠান্ডা বা গরম বাতাস প্রবেশ করে তাহলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই শীতকালে শুষ্ক ঠান্ডা আবহাওয়া বাতাসে উড়ে বেড়ানোয় ধূলিকণার আধিক্যে এ্যাজমার সমস্যা বেড়ে যায়। তবে সঠিক ও নিয়মিত চিকিৎসার ফলে এ উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

এ্যাজমার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। গবেষকরা ধারণা করেন, কিছু বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এ্যাজমা হয়। সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ ঝামেলা বেশি হয়। যাদের রক্তের সম্পর্কের কারও মধ্যে এ্যাজমা থাকে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আশেপাশের বিভিন্ন উপাদান যেমন- ধুলাবালির মধ্যে থাকা মাইট নামের ক্ষুদ্র কীট, ফুলের পরাগরেণু থেকে; পশুপাখির পালক, ছত্রাক, মল্ট, ইস্ট, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে যারা থাকে তাদের এ রোগ হতে পারে। এছাড়াও মানসিক চাপে থাকলে এ্যাজমার তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। কারও কারও বিভিন্ন সুগন্ধি, মশার কয়েল বা কারও কারও কীটনাশকের গন্ধ থেকেও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।

এ্যাজমা রোগের লক্ষণ

    • হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
    • শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়।
    • রোগী জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে, এসময় বুকের ভিতর সাঁই সাঁই আওয়াজ হয়। 
    • ফুসফুসের বায়ুথলিতে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ায় রোগীর কষ্ট বেশি হয়। 
    • কাশির সাথে কখনও কখনও আঠালো কফ বের হয়।
    • সাধারণতঃ জ্বর থাকে না।
    • শ্বাস নেওয়ার সময় রোগীর পাজরের মাঝে চামড়া ভিতরের দিকে ঢুকে যায়।
    • রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।

এ্যাজমার উপসর্গগুলো সাধারণতঃ রাতে বা খুব সকালে বেশি হয় এবং শ্বাসনালীতে কোনো ধরণের এ্যালার্জেন প্রবেশ করলে বা তাপমাত্রা পরিবর্তিত হলে এ উপসর্গের তীব্রতা বেড়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে কাশি বা শ্বাসকষ্ট, বুকে বাঁশির মতো শোঁ শোঁ শব্দ শুরুর আগে নাক বা বুক চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ লাল হয়ে যায়।

অধিকাংশ এ্যাজমা রোগীর ক্ষেত্রেই ঠাণ্ডা আবহাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। বর্ষার ঠাণ্ডা, শীতের ঠাণ্ডায় এই রোগ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ব্রঙ্কিয়াল এ্যাজমা শীতকালে বাড়ে। শীতকালে নাকে একটুখানি ঠাণ্ডা বাতাস বা কুয়াশা প্রবেশ করলেই প্রথমে হাঁচি আসা, নাক দিয়ে পানি ঝরা ও পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির দু-এক ফোটা মাথায় পড়লে, খোলা জানালার পাশে রাতে ঘুমালে রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি পায়।

দীর্ঘদিনের সর্দি, কাশি ও হাঁচি থেকে একসময় স্থায়ীভাবে এ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের সৃষ্টি হয়। বছরের বিশেষ ঋতুতে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেড়ে যায়। এটি ছোঁয়াচে বা জীবাণুবাহিত রোগ নয়।

এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের উপায়

চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো নিয়মিত চেক-আপ করানো। এ্যাজমা সম্পূর্ণ ভাল করার জন্য এখনও কোনও ঔষধ বের হয়নি। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ্যাজমা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সতর্ক থাকা। কোন্ কোন কারণে রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় সেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকা।

এ্যাজমার চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরণের ঔষধ ব্যবহৃত হয় (যেমন- রোগ উপশমকারী ঔষধ, রোগ প্রতিরোধ বা বাধাদানকারী ঔষধ)। এ ঔষধগুলোর সঠিক মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কিভাবে ব্যবহার করা যাবে তা চিকিৎসক নির্ধারণ করে দিবেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ্যাজমা রোগীদের মুখে খাবার ঔষধের চেয়ে ইনহেলার বেশি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। কারণ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে, কম পরিমাণ ঔষধ লাগে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

প্রতিকার -

    • যেসব খাবার খেলে এলার্জি / শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় সেগুলো না খাওয়া।
    • আলো-বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা।
    • যেসব জিনিসের (যেমন- পশুর লোম, কৃত্রিম আঁশ ইত্যাদি) সংস্পর্শে গেলে এ্যালার্জি / এ্যাজমা / শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় সেগুলো থেকে বিরত থাকা।
    • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া ও সাবধানতা অবলম্বন করা।
    • ধূমপান, গুল, জর্দা ইত্যাদির ব্যবহার পরিহার করা।
    • শ্বাসকষ্টের সময় রোগীকে তরল খাদ্য খাওয়ানো।

প্রতিরোধ -

    • স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা।
    • বায়ু দূষণ, বাসস্থান বা কর্মক্ষেত্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে এমন সব বস্তুর সংস্পর্শ পরিহার করা।
    • এ্যাজমা রোগীর শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য সবসময় সাথে প্রয়োজনীয় ঔষধ রাখা ও ব্যবহার করা।

টিপস (এ্যাজমা রোগ নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়)

আদা : আদা হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগের জন্য একটি সুপরিচিত প্রাকৃতিক চিকিৎসা। গবেষকদের মতে, আদা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসনালী সংকোচন রোধে সাহায্য করে। এক কাপ ফুটন্ত পানির মধ্যে মেথি, আদার রস ও মধু দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে। রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় এই মিশ্রণটি পান করলে সমাধান পাওয়া যাবে। এছাড়াও কাঁচা আদা লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়

রসুন : রসুন এ্যাজমা প্রতিরোধে প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। এ্যাজমার একটি বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে বেশী করে রসুন খাওয়ানো যেতে পারে।

মধু : এ্যাজমার সমস্যা নিরাময়ের জন্য মধু খুবই কার্যকর।বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট অনেক কমে যায়। এ্যাজমা ছাড়া সর্দি-কাশি সারাতেও এই মিশ্রণ খুব ভাল কাজ করে।

লেবু : লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ১ গ্লাস পানির মধ্যে একটা গোটা লেবুর রস আর সামান্য চিনি দিয়ে প্রতিদিন খেলে এ্যাজমার কষ্ট অনেকটাই কমে যায়।

বিঃ দ্রঃ- এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য। কোনো ঔষধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মেডিসিন বিভাগ
জমজম ইসলামী হাসপাতাল, রাজশাহী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *